“অদম্য জাগরণ”
আব্দুল্লাহ শাফী
নীল আকাশের নিচে, সবুজ ঘাসে বসে সাদিক নিজের ডায়েরি খুলে বসলো। আজ আর লেখার জন্য নয়, বরং নিজের মনের কথাগুলো শুনতে। কিছুদিন ধরে তার ভেতরে অদ্ভুত এক অস্থিরতা কাজ করছিল। বড় হতে চাওয়া, মানুষকে প্রভাবিত করার ইচ্ছা—সবকিছুই যেন তার মধ্যে দানা বেঁধে উঠছিল, কিন্তু সঠিক পথ খুঁজে পাচ্ছিল না।
সাদিক মনে করল এক বছরের পুরনো সেই দিনটার কথা। জীবনের কঠিনতম সময় পার করছিল সে। পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়া, পরিবারের চাপ, আর নিজের ভেতরে তৈরি হওয়া শূন্যতা—সব মিলিয়ে মনে হচ্ছিল, জীবনটা বুঝি থেমে গেছে। একদিন সন্ধ্যায় তার দাদু এসে পাশে বসলেন। দাদুর হাতে ছিল কুরআনের একটি পুরনো কপি। তিনি মৃদু হেসে বললেন,
“সাদিক, তুমি জানো, মনের শক্তি কী?”
সাদিক একটু বিরক্ত হয়েছিল। সেই মুহূর্তে এ কথার গুরুত্ব তার কাছে ছিল না। কিন্তু দাদু থামলেন না। তিনি গল্প শুরু করলেন,
“একজন বৃদ্ধ লোক ছিল, যার সামনে ছিল একটি বিশাল পর্বত। লোকটি চাইলো এই পর্বত সরাতে। সে প্রতিদিন সকালে গিয়ে ছোট্ট একটি কুড়াল দিয়ে পর্বতের পাথর কেটে আনতে শুরু করলো। সবাই তাকে পাগল বলতো। কিন্তু সে থামেনি। বছরের পর বছর পরিশ্রমের পর, সেই পর্বতটা সত্যিই একদিন হালকা হয়ে গিয়েছিল। জানো কেন? কারণ সে বিশ্বাস করত—মানুষ যা চায়, আল্লাহর সাহায্য আর কঠোর পরিশ্রম থাকলে, তা অবশ্যই সম্ভব ইনশাআল্লাহ।”
দাদুর কথা শুনে সাদিকের ভেতরে যেন একটা আগুন জ্বলে উঠেছিল। সেদিন রাতেই সে নিজের জীবন নিয়ে নতুনভাবে ভাবতে শুরু করল।
পরদিন সকালে, সাদিক একটা পরিকল্পনা করল। তার সমস্যা অনেক ছিল, কিন্তু প্রতিটি সমস্যাকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে নিতে শুরু করল। প্রথমে নিজের সময় ব্যবস্থাপনা ঠিক করল। সে শিখল, জীবনের সমস্যাগুলো কখনোই একদিনে মেটানো যায় না। কিন্তু যদি প্রতিদিন একটু একটু করে কাজ করা যায়, তাহলে ফল আসতে বাধ্য।
সাদিকের সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল তার বিশ্বাস। সে তার ডায়েরিতে লিখল,
“আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা চেষ্টা করো, আমি তোমাদের সাহায্য করব।’ (সূরা আনকাবুত: ৬)
আমি চেষ্টা করব, আল্লাহকে জানাব আমার চাওয়ার কথা। আর বাকি কাজ তিনিই করবেন।”
কয়েক মাস পর, সাদিক নিজের ভেতরে একটা পরিবর্তন অনুভব করল। প্রতিদিন ছোট ছোট কাজ করে সে আজ অনেক দূর এগিয়েছে। তার লেখার অভ্যাস উন্নত হয়েছে। তার পরিবারও তাকে নিয়ে গর্ব করতে শুরু করেছে।
সাদিক একদিন নিজের শহরের একটি বড় লেখক সম্মেলনে গিয়েছিল। সেখানে সে একটা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে জয়লাভ করল। তার কথা শুনে বিচারক বলেছিলেন,
“তুমি জানো কীভাবে নিজের গল্পকে জীবন্ত করে তুলতে হয়। এই গুণটা তোমার ভেতরে এসেছে তোমার মনের শক্তি থেকে।”
আজ সাদিক ডায়েরির শেষ পৃষ্ঠায় লিখল:
“মনের শক্তি হলো আল্লাহর সবচেয়ে বড় উপহার। এটা বুঝতে সময় লেগেছিল, কিন্তু এখন আমি জানি—আমার বিশ্বাস এবং পরিশ্রম আমাকে সব কিছু জেতাতে পারে। আমি যদি নিজের ওপর ভরসা রাখি, আর আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রাখি, তবে কোনো বাধাই আমাকে আটকে রাখতে পারবে না।”
আকাশে চাঁদ উঠেছে। সাদিক জানালার বাইরে তাকিয়ে বলল,
“ধন্যবাদ, আল্লাহ। তুমি আমাকে শিখিয়েছ, কীভাবে জীবনের প্রতিটা চ্যালেঞ্জকে আলোর মতো গ্রহণ করতে হয়।”